বর্তমান যুগ প্রযুক্তির যুগ। মোবাইল আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে যেমন জ্ঞানের দিগন্ত খুলে গেছে, তেমনই মনোসংযোগহীনতা ও সময় নষ্টের বড় কারণও হয়ে উঠেছে। একজন শিক্ষার্থী বা জ্ঞান অন্বেষণকারী যদি মোবাইল ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ না আনতে পারেন, তবে তা তার জন্য এক বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। তাহলে কিভাবে মোবাইল থেকে মন সরিয়ে প্রকৃত জ্ঞান অন্বেষণে মনোনিবেশ করা যায়? নিচে কয়েকটি বাস্তব ও কার্যকর উপায় তুলে ধরা হলো:
১. মোবাইল ব্যবহারের সময় নির্ধারণ করুন:
অত্যন্ত জরুরি নয় এমন সময় মোবাইল হাতে নেওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন। প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটি সময় ঠিক করুন, যখন আপনি ফোন চেক করবেন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দেখবেন। সময় সীমা বেঁধে দিলে আপনার মন মোবাইলের প্রতি আসক্ত হবে না।
২. অফলাইন মুডে পাঠ করুন:
যদি আপনি মোবাইলেই ইসলামি কিতাব বা অনলাইন কোর্সে পড়েন, তাহলে নোটিফিকেশন বন্ধ করে ‘Do Not Disturb’ বা ‘Airplane Mode’ অন করুন। এতে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউবের অহেতুক নোটিফিকেশন আপনার মনোযোগ নষ্ট করতে পারবে না।
৩. নির্দিষ্ট জায়গায় বসে পড়ুন:
মনোযোগ ধরে রাখার জন্য নির্দিষ্ট একটি জায়গা নির্ধারণ করুন যেখানে আপনি কেবল পড়াশোনাই করবেন। এই জায়গায় বসে মোবাইলে ফেসবুক বা ভিডিও দেখা থেকে বিরত থাকুন। এতে আপনার মস্তিষ্ক ওই জায়গাকে “জ্ঞানের জায়গা” হিসেবে চিনে ফেলবে এবং মনোযোগ বাড়বে।
৪. আত্মবিশ্লেষণ করুন:
প্রতিদিন নিজেকে প্রশ্ন করুন— আমি আজ কত সময় মোবাইলে নষ্ট করেছি এবং সেই সময়টা যদি পড়াশোনায় লাগাতাম তবে কী শিখতে পারতাম? নিজের প্রতি এই প্রশ্ন আপনাকে সচেতন করবে। আপনি ধীরে ধীরে মোবাইলের চেয়ে জ্ঞানের দিকে ঝুঁকবেন।
৫. অনুপ্রেরণামূলক ব্যক্তিদের অনুসরণ করুন:
যেসব আলেম, গবেষক বা জ্ঞানীরা আজ বিশাল কিছু হয়ে উঠেছেন— তারা কীভাবে সময়কে মূল্য দিয়েছেন, তা জানুন। মোবাইলের আসক্তি যে কত বড় বিপদ, সেটা উপলব্ধি হলে নিজের জীবন নিয়ে আপনি নতুন করে ভাবতে শুরু করবেন।
৬. বিকল্প অভ্যাস গড়ুন:
মোবাইল হাতে নেওয়ার পরিবর্তে বই পড়ার অভ্যাস করুন। ইসলামি কিতাব, জীবনী, হাদিস, তাফসির ইত্যাদি পড়ুন। আপনার মন মোবাইল ছাড়াও আনন্দ খুঁজে পাবে। শুরুতে ৫-১০ মিনিট করেই শুরু করুন, সময় বাড়িয়ে নিন।
উপসংহার:
মোবাইল নিজে খারাপ নয়, কিন্তু এর ব্যবহার যদি অপ্রয়োজনীয় হয়, তবে তা জ্ঞানের পথে সবচেয়ে বড় বাধা। জ্ঞান অন্বেষণ, আত্মা জাগরণ ও সফলতা অর্জনের জন্য মোবাইলের আসক্তি থেকে বেরিয়ে নিয়ন্ত্রিতভাবে সময়কে কাজে লাগান। আজ থেকেই নিজের মধ্যে জিজ্ঞাসা জাগান— “আমি কী মোবাইলের দাস, না জ্ঞানের পথিক?” এই উত্তরই আপনাকে সঠিক পথে চালিত করবে ইনশাআল্লাহ।