মানুষ স্বপ্ন দেখে — বড় হওয়ার, আলেম হওয়ার, সফল হওয়ার, দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মান পাওয়ার। স্বপ্ন দেখা দোষের নয়, বরং বর্ণিত আছে,
“جعل الله الطموح في قلوب عباده” —
আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দার অন্তরে উচ্চাকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। কিন্তু সেই স্বপ্নের দিশা যদি ঈমান অনুযায়ী না হয়, তাহলে তা হবে এক দিশাহীন কল্পনা মাত্র।
১. স্বপ্ন: একটি প্রাকৃতিক প্রেরণাঃ
যুবক বয়সে স্বপ্ন দেখা মনুষ্যত্বেরই অংশ। এক ছাত্র চায় বড় মুফতি হতে, কেউ চায় বিশ্বমানের স্কলার হতে। কেউ আবার চায় দাওয়াতি কাজ করে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকতে। এই স্বপ্নগুলো যদি হালাল উদ্দেশ্য নিয়ে হয়, তবে তা ইবাদত হয়ে যায়।
২. স্বপ্নকে পরিণত করো ঈমানি পরিকল্পনায়ঃ
স্বপ্নের সাফল্য তখনই আসে, যখন তা ঈমানের ওপর ভিত্তি করে পরিকল্পনা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ—
– বড় আলেম হতে চাও? তাহলে আজ থেকেই কুরআন, আরবি ও হাদিসে মনোযোগী হও।
– দাঈ হতে চাও? তাহলে নিজে আগে আমলের মানুষ হও, খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করো।
– লেখক হতে চাও? তাহলে আজ থেকেই প্রতিদিন কিছু লিখো, শুদ্ধ ভাষা শেখো।
৩. পরিকল্পনায় থাকুক তাওয়াক্কুলঃ
স্বপ্ন পূরণের পথে সবচেয়ে বড় শক্তি হলো — তাওয়াক্কুল। নিজে পরিশ্রম করো, কিন্তু ফলাফলের আশা রাখো আল্লাহর উপর। ঈমান বলে: আমি চেষ্টা করব, সফলতা দিবেন একমাত্র আল্লাহ।
৪. দুনিয়াবি লোভ নয়, আখিরাতের স্বপ্ন রাখোঃ
অনেকেই আলেম হতে চায় বক্তৃতা, ফলোয়ার আর জনপ্রিয়তার জন্য। এটা স্বপ্ন নয়, এটা ঈমানহীন মোহ। প্রকৃত স্বপ্ন হলো— “আমি এমন ইলম অর্জন করব, যার দ্বারা মানুষ সঠিক পথে আসবে, আর আমি আল্লাহর কাছে সম্মানিত হবো।”
৫. স্বপ্নে থাকতে হবে ইখলাস (নিয়তের বিশুদ্ধতা)-
ইখলাস ছাড়া সব স্বপ্ন দুনিয়ার খেলনা। তুমি যদি কেবল মানুষের বাহবা পাওয়ার জন্য পড়ো, তবে সেই স্বপ্নের ফলাফলও শুধু দুনিয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
৬. নিয়মিত নিজের স্বপ্ন ও নিয়ত যাচাই করোঃ
মনে রাখো, সময়ের সাথে সাথে নফস স্বপ্নের উদ্দেশ্যকে বদলে দেয়। তাই প্রতিনিয়ত নিজের মনের সঙ্গে কথা বলো, নিয়ত পরিশুদ্ধ করো।
উপসংহারঃ
একজন তালিবে ইলম হোক এমন, যে স্বপ্ন দেখে, কিন্তু স্বপ্নের দিকে অগ্রসর হয় আল্লাহর বিধান, রাসূলের সুন্নাহ, ও পরকালীন জবাবদিহিতা মাথায় রেখে। স্বপ্ন দেখতে হবে— কিন্তু সে স্বপ্ন যেন তোমার ঈমানের শক্তি দিয়ে পরিচালিত হয়।
তাহলেই সে স্বপ্ন তোমাকে শুধু সফল করবে না, বরং জান্নাতের পথে পৌঁছে দেবে।
স্বপ্ন দেখো, কিন্তু পরিকল্পনা করো ঈমান অনুযায়ী — এটাই প্রকৃত মুসলিম তরুণের পথ।