দ্বীনি পড়াশোনার সাথে পারিবারিক ভারসাম্য

দ্বীনি পড়াশোনার সাথে পারিবারিক ভারসাম্য

দ্বীনি শিক্ষার লক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি, আত্মশুদ্ধি এবং সমাজে হিদায়াতের আলো ছড়ানো। কিন্তু এই মহান যাত্রার পথে অনেক সময় আমরা পরিবারের প্রাপ্য দায়িত্ব ও ভালোবাসা থেকে বিচ্যুত হই। অথচ ইসলাম কোনো একক জীবনব্যবস্থার কথা বলে না, বরং ভারসাম্যপূর্ণ জীবনই ইসলামের সৌন্দর্য।

১. পরিবারকে বোঝানো এবং অন্তর্ভুক্ত করাঃ

দ্বীনি পড়াশোনা শুরু করার আগে পরিবারকে জানিয়ে ও বুঝিয়ে নেয়া জরুরি। তাদের মাঝে আমাদের লক্ষ্যের প্রতি আস্থা তৈরি করতে হবে। কোনো দ্বীনি ছাত্র যদি পরিবারের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা না করে, তাহলে দূরত্ব তৈরি হতে পারে। তাই প্রথম ধাপ হলো — সচেতনতা ও আন্তরিক যোগাযোগ।

২. সময় ভাগ করে দেয়াঃ

যেমন ফিকহ, তাফসির ও হাদীস পড়ার জন্য সময় নির্ধারিত, তেমনি সপ্তাহে অন্তত একদিন বা নির্দিষ্ট ঘণ্টা পরিবারকে দেয়াও জরুরি। 

শুধু পড়াশোনায় ডুবে থাকলে পরিবারে কষ্ট আসে, আর কষ্টের দোয়া একজন আলেম ছাত্রের বরকত কমিয়ে দিতে পারে। তাই পরিবারকেও সময় দেওয়া মানে দ্বীনি দায়িত্ব পালন।

৩. পরিবারকে দ্বীনি শিক্ষায় সম্পৃক্ত করাঃ

ঘরে ফিরে মায়ের সঙ্গে একটু কুরআন তিলাওয়াত করা, ছোট ভাইকে ইসলামি গল্প শোনানো বা বাবাকে কোনো ফিকহি মাসআলা বলা — এসব দ্বীনি পড়াশোনাকে পরিবারে ছড়িয়ে দেয়। এতে একদিকে জ্ঞান পুনরাবৃত্তি হয়, অন্যদিকে পরিবারও উপকৃত হয়।

৪. আচরণে দীনদারি দেখানোঃ

ছাত্র যখন দ্বীনি শিক্ষা নিচ্ছে, তখন তার আচরণও হতে হবে নম্র, সহানুভূতিপূর্ণ ও দায়িত্বশীল। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা, ছোট খাটো কথা নিয়ে বিরক্ত হওয়া বা হুকুমের সুরে কথা বলার মাধ্যমে দ্বীনের সৌন্দর্য কমে যায়। 

যেমন, রাসূল ﷺ পরিবারে ছিলেন সবচেয়ে বিনয়ী ও সহানুভূতিশীল সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব।

৫. পরিবারকে কষ্ট না দিয়ে জ্ঞান অর্জনঃ

কখনো দেখা যায়, ছাত্র পড়াশোনার খরচের জন্য পরিবারকে চাপে ফেলছে, অথচ অন্যভাবে উপার্জনের সুযোগ আছে। এটা দ্বীনের আদর্শ নয়। বরং যেহেতু দ্বীন মানেই সহজতা — তাই যতটা সম্ভব সহজ ও ভারসাম্যপূর্ণ পথে অগ্রসর হওয়াই উত্তম।

৬. দুঃসময়ে পরিবারের পাশে থাকাঃ 

পরীক্ষার সময় হোক বা কঠিন পড়া হোক — কোনো দুঃসংবাদে, অসুস্থতায়, পারিবারিক সমস্যায় ছাত্রের উচিত আত্মগোপন না করে পাশে থাকা। কারণ দ্বীনি পড়াশোনা আমাদের কেবল বই মুখস্থ শেখায় না, বরং আমাদের করে তোলে “হক আদায়কারী”। আর সবচেয়ে বড় হক হলো পরিবার ও মা-বাবার।

উপসংহার: 

দ্বীনি ছাত্র যদি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়, তবে সে যেমন অভিশপ্ত হতে পারে, তেমনি তার দাওয়াত গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। 

সুতরাং দারসে নিযামী একাডেমির ছাত্র হিসেবে আমাদের প্রতিজ্ঞা হওয়া উচিত — পরিবারই হোক আমার প্রথম মাদরাসা। 

দ্বীন শিখবো, আবার পরিবারকে দ্বীনের স্বাদও পৌঁছাবো ইনশাআল্লাহ। 

জ্ঞান ও পরিবার — উভয়ই হক, উভয়েই বরকত।

Tags: No tags

Leave A Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *