নফসের সঙ্গে যুদ্ধ – একজন তালিবে ইলমের জিহাদ

নফসের সঙ্গে যুদ্ধ – একজন তালিবে ইলমের জিহাদ

ইলম অর্জনের পথে একজন তালিবে ইলমের সবচেয়ে বড় শত্রু কে? বাহ্যিকভাবে আমরা বলি— সময়, দুনিয়ার মোহ, সোশ্যাল মিডিয়া, আলসেমি ইত্যাদি। কিন্তু প্রকৃত শত্রু হলো — “নিজের নফস”, অর্থাৎ আমাদের অন্তরের সেই কুপ্রবণতা, যা আল্লাহর পথে বাঁধা তৈরি করে। এই নফসের বিরুদ্ধে লড়াই করাই একজন ইলমপ্রত্যাশীর সবচেয়ে কঠিন, কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিহাদ।

১. নফসের স্বরূপ বোঝা জরুরিঃ

নফস সবসময় চায় আরাম, খ্যাতি, সম্মান, মানুষে প্রশংসা করুক — অথচ, সে আল্লাহর সন্তুষ্টির চেয়ে এগুলোকে বেশি প্রাধান্য দেয়। একজন তালিবে ইলম যদি খ্যাতির জন্য ইলম চায়, তাহলে সেটা হবে ‘রিয়া’ বা দেখানোর জন্য অর্জন। এটি জ্ঞানকে অভিশপ্ত করে দেয়।

২. নফসের তিনটি স্তরঃ

ইমাম গাযালী (রহ.) বলেন, নফসের তিনটি স্তর রয়েছে — 

– নফসে আম্মারা : যা সবসময় খারাপ কাজের আদেশ দেয়।

– নফসে লাউওয়ামা : যা নিজের ভুলের জন্য অনুশোচনা করে।

– নফসে মুতমায়িন্না : যা আল্লাহর সন্তুষ্টিতে প্রশান্ত থাকে।

একজন তালিবের কাজ হচ্ছে — নিজের নফসকে প্রথম স্তর থেকে তৃতীয় স্তরে নিয়ে যাওয়া। এর জন্য চাই মুজাহাদা — নিয়মিত আত্মনিয়ন্ত্রণের চেষ্টা।

৩. নফসের প্রধান ফাঁদসমূহঃ

– আলসেমি ও বিলম্ব : “আজকে না, কাল থেকে শুরু করব।” 

– শরীরকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া : বেশি ঘুম, খাওয়া ও বিশ্রামে আসক্তি।

– আত্মপ্রশংসা ও অহংকার: “আমি অনেক কিছু জানি”, “আমি অন্যদের চেয়ে ভালো”।

– সোশ্যাল মিডিয়ার মোহ : ৫ মিনিট দেখা শুরু করে ২ ঘণ্টা নষ্ট।

৪. মুজাহাদা: নফসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের উপায়ঃ

– নিয়মিত রুটিন: ঘুম, খাওয়া, পড়াশোনা — সবকিছুর জন্য নির্দিষ্ট সময় ঠিক রাখা।

– নিয়মিত আত্মসমালোচনা: আজ আমি কতটুকু সময় আল্লাহর জন্য ব্যয় করেছি? এটার হিসাব রাখা।

– কম খাও, কম বল, বেশি কাজ কর : এটি তালিবে ইলমের সুন্নত। সকল আল্লাহ ওয়ালাগণ এভাবেই কাজ করতেন।

– নিজেকে ছোট মনে করা: বড় বড় ওলামায়ে কেরামের জীবন পড়া ও নিজের নফসকে তাদের তুলনায় নগণ্য ভাবতেন। উনাদের রাস্তামতেই চলা।

– যিকির ও ইস্তেগফার: এ কাজ হৃদয়কে জীবিত রাখে ও নফস দুর্বল করে।

৫. নফসকে নিয়ন্ত্রণ না করলে কী হয়?

যদি নফসকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়, তবে সে ইলমকে দুনিয়ার হাতিয়ার বানিয়ে ফেলে। তখন ইলম হয় ক্ষমতা অর্জনের মাধ্যম, মানুষকে ছোট করার অস্ত্র। তখন এক তালিবে ইলম হয়ে যায় এক গর্বিত বক্তা — কিন্তু আল্লাহর কাছে শূন্য।

উপসংহার 

তালিবে ইলমের জিহাদ বাহ্যিক যুদ্ধ নয়, বরং আত্মার ভেতরের লড়াই। এই জিহাদে সফল হতে পারলে — সে শুধু আলেম নয়, একজন দাঈ, একজন সিদ্দিক, একজন সত্যিকার খলিফা হয়ে উঠতে পারে। 

তাই বলি — নিজের নফসকে চিনো, ওর বিরুদ্ধে লড়াই করো, তাহলেই আসবে প্রকৃত বরকত।*  এই জিহাদই তালিবে ইলমের আসল শান।

Tags: No tags

Leave A Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *