একজন ছাত্রের জন্য সময় ব্যবস্থাপনার ফিক্বহ

একজন ছাত্রের জন্য সময় ব্যবস্থাপনার ফিক্বহ

সময় একটি অমূল্য সম্পদ। একজন মুসলিম ছাত্রের কাছে সময় কেবল পঠন-পাঠনের উপাদান নয়, বরং আমানত।

কুরআনে আল্লাহ বলেন,

 “وَالْعَصْرِ إِنَّ الإِنسَانَ لَفِي خُسْرٍ” –

অর্থাৎ, “সময়ের শপথ, মানুষ ক্ষতিতে রয়েছে।” (সূরা আল-আসর) 

এ আয়াতেই সময় ব্যবস্থার ফিক্বহের ভিত্তি লুকিয়ে আছে।

১. সময়কে নিয়ামত হিসেবে বুঝাঃ

আল্লাহর রাসুল ﷺ বলেন, “দুইটি নিয়ামতের ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষ প্রতারিত — স্বাস্থ্য ও অবসর।” 

ছাত্র হিসেবে আমাদের সময়কে অবহেলা করা মানেই তা অপচয় করা, যার হিসাব কিয়ামতে দিতে হবে।

২. নিয়মিত সূচি তৈরি করাঃ

একজন আলেম ছাত্রের উচিত প্রতিদিনের কাজ ও পড়ালেখার নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করা। এতে ‘ফজরের পর তিলাওয়াত’, ‘যোহরের আগে রিভিশন’, ‘আসর-পরবর্তী আত্মউন্নয়ন’, এমন ভাগ করে কাজ করা সহজ হয়।

৩. প্রথম কাজ প্রথমেঃ

ইমাম গাযালী (রহ.) বলেন, “যে ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ কাজে গুরুত্ব না দিয়ে গৌণ কাজকে প্রাধান্য দেয়, সে কখনো বড় কিছু অর্জন করতে পারে না।” 

তাই ছাত্রকে শেখা উচিত — কোনটি ফরজ, কোনটি মুস্তাহাব, কোনটি বিলম্বযোগ্য।

৪. ফজরের সময়কে কাজে লাগানোঃ

ফজরের পরের সময় হলো সবচেয়ে বরকতময়। হাদীসে আছে, রাসুল (ﷺ) ইরশাদ করেন, “ আল্লাহ তায়ালা আমার উম্মতের ফজরের সময়কে বরকতময় করেছেন।” 

এই সময়ে পড়লে কম সময়েই বেশি মনে থাকে।

৫. মোবাইল ও সোশ্যাল মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণঃ

আজকের শিক্ষার্থীর সবচেয়ে বড় চোর হলো স্ক্রিন! প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে মোবাইল ব্যবহার না করলে, সময় হরণ হবেই। 

“যা দরকার নয়, তা পরিহার করাই ইমানের নিদর্শন” — হাদীসের এ কথাটি মনে রাখা জরুরি।

৬. যিকির ও দোয়ার মাধ্যমে মন ফোকাস করাঃ

যখন পড়ালেখায় মন বসে না, তখন ১-২ মিনিট চোখ বন্ধ করে আল্লাহর যিকির করলে মন স্থির হয়। সময়ের সঠিক ব্যবহার তখনই হয়, যখন অন্তর স্থির থাকে।

৭. সাপ্তাহিক ও মাসিক লক্ষ্য নির্ধারণঃ

প্রতিদিনের কাজগুলো ছোট ছোট লক্ষ্য অনুযায়ী ভাগ করে নিলে তা অর্জন সহজ হয়। 

যেমন: “এই সপ্তাহে ২ পারা হিফজ”, “এই মাসে ১ কিতাব শেষ” — এভাবে নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকলে সময়ের সঠিক সদ্ব্যবহার হয়।

৮. বেকার সময় নেই – কাজের ধরন পাল্টাওঃ

যখন কোনো বিষয়ের পড়ায় ক্লান্তি আসে, তখন বিষয় পাল্টাও — আরবির জায়গায় ইতিহাস, বা তাফসিরের জায়গায় ফিকহ। এতে সময়ের অপচয় রোধ হয়।

উপসংহার: 

আল্লামা ইবনে জওযী বলেন, “সময়ের গুরুত্ব যদি মানুষ বুঝত, তবে তারা কোনো কথা বলত না, শুধু কাজ করত।” 

তাই দারসে নিযামী একাডেমির ছাত্র হিসেবে আমাদের শপথ নিতে হবে — সময় হবে আমাদের সবচেয়ে বড় পুঁজি, যার দ্বারা আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা অর্জন করব ইনশাআল্লাহ।  সময় বাঁচাও, জীবন গড়ো, জ্ঞান অর্জনে আত্মাকে জাগাও।

Tags: No tags

Leave A Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *